হুমায়ুন আহমেদ নাইম শহরের ব্যস্ত রাস্তা। লাল সিগন্যালে থেমে থাকা গাড়ির উপচে পড়া ভিড়। গাড়ির ভেতরে কান্নায় ভেঙে পড়া একটি শিশু তার বাবা-মায়ের কাছে বেলুনের জন্য বায়না ধরেছে। বাবা রাস্তার ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক পথশিশুকে ডাক দিয়ে একটি বেলুন কিনে নিলেন। শখ পূরন হলো।
কখনো আবার পার্কে প্রেমিক তার প্রেমিকার রাগ ভাঙানোর জন্য ফুল কিনে নেন কোনো পথশিশুর কাছ থেকে। কিন্তু যে শিশুটি অন্যশিশুর হাতে রঙিন স্বপ্ন তুলে দিলো, কোনো প্রেমিকার মান ভাঙার কারণ হলো - তার নিজের জীবনে কোনো রঙ নেই। তার হয়তো মা-বাবাও নেই। নেই বায়না ধরার কোনো জায়গা। এ শহরের পথই তার বাড়ি।
হারিয়ে যায় শৈশবএই পথশিশুরা জন্ম থেকেই বঞ্চনার শিকার। তাদের কারও বাবা-মা নেই, কারও আবার থেকেও নেই। ফুটপাত, বস্তি কিংবা রেলস্টেশনই তাদের একমাত্র আশ্রয়। পাঠ্যবইয়ের অক্ষর চেনার সুযোগ নেই; জীবন নামের কঠিন বাস্তবতাই তাদের একমাত্র শিক্ষক। সকালে তারা রঙিন বেলুন, ফুল ইত্যাদি নিয়ে পথে রেব হয়, রাতে ফিরে আসে খালি হাতে কিংবা ক্ষুধার্ত পেটে।
স্বপ্নহীন বেড়ে ওঠাশিশুরা জন্মগতভাবেই স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে। কিন্তু পথশিশুদের স্বপ্নের জায়গা দখল করে নেয় ভয় আর অনিশ্চয়তা। স্কুলে যাওয়া, খেলাধুলা করা কিংবা পরিবার নিয়ে বেড়ানোর স্বপ্ন তাদের কাছে বিলাসিতা ছাড়া কিছু নয়। পরিবারহীন হতাশার কারণে বয়স বাড়তে না বাড়তেই কেউ জড়িয়ে পড়ে মাদক সেবনে, কেউ বা নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে। একসময় তারা হারিয়ে যায় শহরের অন্ধকার গলিতে।
সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতাএকটি শিশু কোনোভাবেই অপরাধী হয়ে জন্মায় না। সমাজের অবহেলা আর রাষ্ট্রীয় উদাসীনতার কারণেই তারা অসহায় হয়ে পড়ে। সরকার, এনজিও এবং সাধারণ মানুষ ইত্যাদি সবাই মিলে এই শিশুদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি। দরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপদ আশ্রয় আর কর্মসংস্থানের সুযোগ। করুণা নয়, অধিকারই হতে হবে তাদের প্রাপ্য। শীতকাল আসছে, এ সময়ে তাদের কষ্ট আরও তীব্র হয়। তাই সমাজের সকলের উচিত তাদের পাশে থাকা।
যে শিশুটি আজ রঙিন বেলুন কিংবা ফুল হাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে, সেই আগামী দিনের নাগরিক, সেও এদেশের কর্ণধার। তাকে যদি আমরা অন্ধকারে ফেলে রাখি, তবে সেই অন্ধকারই সমাজকে গ্রাস করবে। প্রয়োজন শুধু একটু উদ্যোগ, একটু মানবিকতা। তাহলেই হয়তো একদিন সত্যি সত্যিই রঙিন হবে পথশিশুদের জীবন।
আরও পড়ুন ঘোড়া চালানো শিখতে পারবেন ঢাকার ৩০০ ফিটেগ্রামজুড়ে চলছে চুলার আগুনে বাঁশ সেঁকা
এসএকেওয়াই/এএমপি/জেআইএম
Monday 3 November 2025
⁞
